চট্টগ্রাম ব্যুরো::
মিরসরাইয়ে বিএনপি নেতা নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের অনুসারীদের দুগ্রুপের মধ্যে বানিজ্য মেলায় কথা কাটাকাটির জেরে এক পক্ষ অপরপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় মুন্না (২০) নামে যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১০ জন বিএনপির নেতাকর্মী। (১৩ জানুয়ারি) সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা মিরসরাই পৌর সদরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুন্না মিরসরাই পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের গোভনীয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। আহতদের মধ্যে শাকিল নামের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বানীয়রা জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত বিএনপি নেতা জাহেদ ও যুবদল নেতা কামরুল দু’জনই মিরসরাই বিএনপি নেতা নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের অনুসারী।

নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের দুই পাশে জাহেদ ও কামরুল
যুবদল কর্মী মো. মুন্না (২২) হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চারজন হলেন মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসান (৩৭), মো. শাহ আলম (৪৭), মো. আরমান (২৬) ও নাজমুস সাকিব (২২)। এর আগে মুন্না হত্যার ঘটনায় সোমবার রাত ১২টায় মুন্নার ভগ্নিপতি আরাফাত হোসেন মিরসরাই থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘সোমবার রাতে মিরসরাই সদরে বিএনপি ও যুবদলের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির রেশ ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মুন্না নামের এক যুবক নিহত হন। ঘটনার পর রাতেই মুন্নার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সাথে কামরুল
সোমবার সন্ধ্যার পরে মিরসরাই স্টেডিয়ামে বাণিজ্য মেলায় মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের সাথে মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহবায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে জাহিদ হুসাইনের অনুসারীদের হামলায় আহত হয় কামরুল হাসানের এক কর্মী।
পরবর্তীতে মেলা থেকে বের হয়ে রাত ১০ টার দিকে কামরুলের অনুসারীরা জাহিদ হুসাইনের বাড়ীতে এবং তার অনুসারীদের উপর হামলা চালায়। এই ঘটনার বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসএ কজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ গত ৫ আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানের পর থেকে নুরুল আমীন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন বিভিন্ন এলাকায় অধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ লিপ্ত হচ্ছে।

খুনের দায়ে গ্রেপ্তার কামরুল
স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, বিগত দিনে যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে দীর্ঘ ১৫ বছর মামলা হামলার শিকার হয়েছে, তাদের ওপর হামলা চালাতে দ্বিধা করেনা নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নুরুল আমীন চেয়ারম্যান পুরো মিরসরাইয়ে আ,লীগ দোসরদের সাথে নিয়ে একক অধিপত্য বিস্তার করে আসছে।
৫ আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানের পর নুরুল আমীন চেয়ারম্যান এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তার কথার বাহিরে মিরসরাই থানা এলাকায় অসুস্থ বিএনপি নেতাকে দেখতে গিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে।

নিহত যুবদল কর্মী মুন্না
স্থানীয় নেতাকর্মীরা আরও বলেন, দলের হাইকমান্ড নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা না নিলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে মাঠে কাজ করতে নেতাকর্মীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তন্ময় জামশেদ আলম বলেন, মুন্না নামের একজনকে নিহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শাকিল নামের আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।