নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশনায় চট্টগ্রামের মিরসরাই বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান সহ চার সহযোগীর বহিঃস্কারে স্বস্থি ফিরেছে সর্বত্র। দলীয় বিশৃঙ্খলা রোধ ও সাংগঠনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর ও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। চাঁদাবাজি-দখল ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে দলটি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন।
দলটি প্রথমে কারণ দর্শাও নোটিশ, ক্ষেত্রবিশেষে বহিষ্কার কিংবা পদ স্থগিতের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএনপির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের এ বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা যায়, সেজন্য দলীয় হাইকমান্ড নানা কৌশলে বিরামহীনভাবে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ পর্যায়ে বিতর্কিত নেতাকর্মীদের প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে।
দলীয় শৃঙ্খলা চরমভাবে লঙ্ঘন, সংঘাত-হানাহানি সৃষ্টি, দলীয় এবং চাঁদাবাজি, দখলদারি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সংঘাত ও হানাহানি সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত পত্রে এই কথা জানানো হয়েছে।
বহিষ্কৃত বাকি নেতারা হলেন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন। অভিযুক্ত নেতাদের দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গংদের বিরুদ্ধে এতোদিন ভয়ে মুখ না খুললে অপকর্ম গুলো একের পর এক শোনা যাচ্ছে। মিরসরাইয়ের সাধারণ জনগন অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম জানান, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার কারণে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
মূলত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে। যেসব নেতাকর্মী অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে দলের ইমেজ নষ্ট করতে চায়, তা পর্যবেক্ষণে দলের কজন সিনিয়র নেতা ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে তারেক রহমান খোঁজ নিচ্ছেন। যে কারণে অভিযোগ উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এককথায় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর তারেক রহমান। তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—চাঁদাবাজ ও উচ্ছৃঙ্খল নেতাদের কোনো ছাড় নেই। দল দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। প্রয়োজনে বহিষ্কার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা হবে। এ ছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে কোনো শাখার কোনো নেতাকর্মী দখল-চাঁদাবাজি কিংবা বিশৃঙ্খলা করলে ওই ইউনিট কমিটিও বিলুপ্ত করা হবে। এরই মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যেসব নেতাকর্মী অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি ও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত, তাদের সাংগঠনিকভাবে তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হচ্ছে।
আলাপকালে মিরসরাই বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালা বদলের পর দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। আর এ সুযোগে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থকরা নেতাকর্মী বিশৃঙ্খলায় জড়িয়েছেন। চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা দলের যে স্তরের নেতাকর্মীই হোক না কেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের কারণে দেশব্যাপী যাতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরতে না হয়, সে জন্যই বিএনপির হাইকমান্ড আগেভাগেই সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। যত বড় ত্যাগী নেতাই হোন না কেন, বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ-বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি একটি বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকেই অনেকভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে—এটিই স্বাভাবিক। দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা-অপরাধের অভিযোগ আসছে। তবে অভিযোগ প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। অপরাধ করে কেউ পার পাচ্ছেন না। দলের নাম ভাঙিয়ে যারাই কোনো অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেননি, এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিএনপি বৃহৎ পরিবার, বিভিন্ন জায়গায় অনেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের চেষ্টা করছে, তবে এসব জানার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারেক রহমান। দলের নামে যে কেউ কোনো ধরনের অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী ও সহিংসতামূলক কর্মকা- করবে, সে রেহাই পাবে না। একই সঙ্গে কোনো উসকানির মুখে প্রতিক্রিয়া না দেখাতে নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।